আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি সেটি অবিনশ্বর। এর কোনো ক্ষয় নেই, এটি শুধু একটি রুপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হয়। একটা পাখর উপরে তুললে তার মাঝে স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তির জন্ম হয়। পাথরটা ছেড়ে দিলে বিভব বা স্থিতিশক্তি কমতে থাকে এবং গতিশক্তি বাড়তে থাকে। মাটি স্পর্শ করার পূর্ব মুহূর্তে পুরো শক্তিটাই গতিশন্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু মাটিকে স্পর্শ করার পর পাথরটি যখন থেমে যায় তখন তার ভেতরে গতিশক্তিও থাকে না বিভব শক্তি থাকে না, তাহলে শক্তিটা কোথায় যায় ?
চিত্র 4.02: একটি পেন্ডুলাম দুলছে ,মোট গতিশক্তি এবং বিভবশক্তির মাঝে স্থান বদল করছে
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ পাথরটা যখন মেঝেতে আঘাত করে তখন সেটি শব্দ করে যেখানে আঘাত করেছে সেখানে তাপের সৃষ্টি করে অর্থাৎ গতিশক্তিটুকু শব্দ কিংবা তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
বিভব এবং গতিশক্তির ভেতরে রূপান্তরের উদাহরণটি চমৎকার (চিত্র 4.02)। একটি ছোট পাথরকে সুতা দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে যদি আমরা একপাশে একটু টেনে নিই তাহলে সেটি তার স্থির অবস্থা থেকে একটু উপরে উঠে যায় বলে তার ভেতর এক ধরনের স্থিতিশক্তির জন্ম হয়। এখন পাথরটা ছেড়ে দিলে তার ভেতরকার অসাম্য বলের জন্য সেটি তার স্থির অবস্থার দিকে যেতে থাকে এবং তার মাঝে গতির সঞ্চার হয়। ঠিক মাঝখানে যখন পৌঁছায় তখন তার বেগ থাকে সবচেয়ে বেশি তাই সেটি থেমে না গিয়ে অন্যদিকে যেতে থাকে এবং বেগ নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত উপরে উঠতে থাকে অর্থাৎ তার ভেতরে আবার স্থিতিশক্তির জন্ম হয়। যখন এটি সবচেয়ে উঁচুতে পৌঁছে গিয়ে থেমে যায় তখন তার স্থিতিশক্তির জন্য সেটি আবার স্থির অবস্থার দিকে যেতে থাকে। এভাবে পাথরটি দুলতে থাকে এবং স্থিতিশক্তি থেকে গতিশক্তি এবং গতিশক্তি থেকে স্থিতিশক্তির মাঝে রূপান্তর হতেই থাকে। ঘর্ষণ এবং অন্যান্য কারণে শক্তি ক্ষয় না হলে এই প্রক্রিয়াটি অনন্তকাল ধরে চলতে থাকত!
কাজেই শক্তির রূপান্তর খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। শুধু বিভব শক্তি এবং গতিশক্তির মাঝে যে রূপান্তর হতে পারে তা নয়। আমাদের পরিচিত সব শক্তিই এক রূপ থেকে অন্য রূপে যেতে পারে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি সেটি সৃষ্টিও হয় না ধ্বংসও হয় না, শুধু তার রূপ পরিবর্তন করে। এটাই হচ্ছে শক্তির নিত্যতার সূত্র।
Read more